আজকে বাংলাদেশে রাজাকার-আলবদরদের
বিচার হচ্ছে। সবাই খুশি আমরা। কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান,
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মুজাহিদের
ফাঁসি হয়ে গেছে। গোলাম আযম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জেলদণ্ড
হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামীর রায়ও খুব শীঘ্রই হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসে এই সব
রাজাকারদের বিচার করাটা একটু কঠিন ব্যাপারই। সেটা আরো দুঃসাধ্য হয়েছে অন্য একটি
কারণের জন্যও। স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবকে
সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলো
একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা। তারপর থেকে আমাদের সমাজে পুষ্ট হয়েছে তারা। আর্থিক এবং
রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে প্রভুত। সমাজেও ভিত গড়ে তুলেছে দারুণ মজবুতভাবে। তাদের
দাপট, অহংকার এবং দম্ভে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের
সমাজে টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছিলো এক সময়।
এই বাংলার মাটিতে তাদের কৃতকর্মের
জন্য বিচার করা যাবে,
সেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলো প্রায় সকলেই। প্রায় সকলেই, কিন্ত একজন না। সেই একজনের কথাই বলছি।
ইনি একদিন খুব ভোরে হারিয়েছেন তার
পরিবারের সদস্যদের। নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন দীর্ঘকাল। তারপর ফিরে এসেছেন দেশে।
আন্দোলন, সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। তাঁর জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে
তারেক আর বাবরের গুণ্ডাবাহিনী। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন তিনি। হারিয়েছেন এক কানের
শ্রবণ ক্ষমতা চিরতরে। ছদ্ম সেনা শাসকেরা তাঁকে দেশে আসতে দিতে চায় নি কেয়ারটেকার
সরকারের সময়। খালেদা জিয়াকেও দেশ থেকে বের করে দীর্ঘস্থায়ী সেনা শাসন কায়েমের
পরিকল্পনা ছিলো তাদের। তিনি জানতেন দেশে ফিরলে গ্রেফতার হবেন, তারপরেও ফিরে এসেছিলেন অসীম সাহসিকতা নিয়ে। তিনি আসাতে খালেদা জিয়াও শক্তি
পান, নির্বাসনে যাবেন না বলে পণ করেন তিনিও। ছদ্ম সেনা
শাসকেরা দুজনকে জেলের মধ্যে পুরে দেয়। দুজনের মাটি কামড়ে দেশে পড়ে থাকার কারণে
বাংলাদেশ বেঁচে যায় আরেক সেনা শাসনের হাত থেকে।
তাঁর বাচালতার কারণে তিনি প্রায়শই
সমালোচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি তাঁকে ছাড় দেয় না এক বিন্দুও। পারলে
দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরও কঠোর সমালোচনার
সম্মুখীন হন তিনি প্রায়শই। নিঃসঙ্গ একজন মানুষ তিনি। তাঁর যতোখানি প্রাপ্য ছিলো
প্রশংসার, সেটা পান নি তিনি। বরং তাঁর কিছু কাজের জন্য নিন্দাটাই বেশি জুটেছে কপালে
তাঁর।
তারপরেও এইটুকু বলতে আজ দ্বিধা
নেই যে, তিনি না থাকলে এই সব রাজাকারদের বিচার করার ক্ষমতা বাংলাদেশে আর কারো ছিলো
না। এটা করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের উপরেও ঝুঁকি নিয়েছেন। চিরদিন তিনি ক্ষমতায়
থাকবেন না। একবার ক্ষমতা থেকে সরে গেলেই এই সব শকুন, কুকুরেরা
ছিড়ে ফুড়ে খাবে তাঁকে প্রবল প্রতিহিংসায়।
অনেকেই অনেক নামে ডাকেন তাঁকে।
কেউ ডাকে আপা, কেউ ডাকে বুবু, কেউ ডাকে জননেত্রী বলে। সব পরিচয়
ছাপিয়ে তিনি আসলে শেখের বেটি। শার্দুলের বাচ্চা যে শার্দুলই হয়, সেটা প্রমাণ করেছেন এই শেখের বেটি।
সশ্রদ্ধ সালাম আপনাকে শেখের বেটি।
No comments:
Post a Comment